Thursday, October 22, 2015

নোয়াখালীকে বাংলাদেশের সবার কাছে তুলে ধরার এইটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। লেখার মাত্র প্রথম পর্ব ব্লগে দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে পুরো নোয়াখালী সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন। 

নোয়াখালী পরিচিতি


বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে চালাক কোন জেলার মানুষ? উত্তরঃ নোয়াখালী।

বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে ব্যাবসায়ী কোন অঞ্চলে বেশি? নোয়াখালী 
বাংলাদেশে নারিকেল কোথায় সবচেয়ে সস্তাতে পাওয়া যায়? নোয়াখালী 
কোথায় একই সাথে সৈকত এবং বন দেখা যায়? নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী। 

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা আকারে মাঝারি একটা জেলা নোয়াখালী। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে থাকা বিভাগটির আয়তন ৪,২০২ বর্গ কি.মি। জেলায় থানা রয়েছে ৯টি এবং পৌরসভা রয়েছে ৮টি।এক সময়ে ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর নিয়ে বিশাল এক নোয়াখালী ছিল। কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক কাজের জন্য ফেনী এবং লক্ষ্মীপুরকে পৃথক জেলা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো আপনি ফেনী বা লক্ষ্মীপুরের কোন মানুষকে জিগ্যেস করবেন তার বাড়ি কোথায়। সে উত্তর দিবে নোয়াখালী।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য আসলে ভ্রমন পিপাসুদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। সুতরাং আমি নোয়াখালীর অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা ইত্যাদি এইসব দিকে যাবো না। প্রয়োজন পরলে দুই একটা কথা বলবো শুধু।

নোয়াখালী জেলায় যাতায়াত ব্যাবস্থা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। প্রায় পুরো নোয়াখালীতে লোকাল সি.এন.জি চলে। আপনি খুব কম খরচে যেকোনো জায়গায় খুব কম সময়ে চলে যেতে পারবেন।

নোয়াখালী সদর-মাইজদি

কোন জেলায় গেলে মানুষ সেই শহরের সদরে থাকতে চায়। নোয়াখালীর সদর হচ্ছে মাইজদি। আদি নাম সুধারাম। এই পর্বে আমি মাইজদি সম্পর্কে জানাবো আপনাদের। মাইজদি থানার আয়তন ৩৩৬.২১ বর্গ কি.মি। বাংলাদেশের থানা হিসেবে কিন্তু ছোট না একেবারে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি  থেকে ৭৬৪ গুন বড়। প্রথমেই বলে নেই আপনি যদি মাইজদিতে গিয়ে গ্রামের স্বাদ খুজেন, তাহলে ভুল করবেন। মাইজদি শহর খুবই আধুনিক। বাড়ি-ঘর এবং রাস্তা-ঘাট সবই পাকা এবং খুবই ছিমছাম।  ভ্রমনপিপাসুদের
জন্য মাইজদিতে কয়েকটি জায়গা রয়েছে যা একদিনে ঘুরেই শেষ করতে পারবেন। দর্শনীয় জায়গাগুলো হচ্ছে নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জেলা জামে মসজিদ যা ১৯৫০ সালে নির্মিত, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, আদালত প্রাঙ্গন, পাবলিক লাইব্রেরি। ছোটখাটো একটি পার্কও রয়েছে মাইজদি শহরে।

মাইজদি উপজেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নোয়াখালী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০ একর জমির উপর নির্মিত এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি। নোয়াখালী আসলে অবশ্যই নোয়াখালী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসবেন।  

থাকার জায়গার জন্য মাইজদি নোয়াখালীতে সবচেয়ে ভালো জায়গা। এখানে রয়েছে তিন তারকা হোটেল যার নাম নাইস গেস্ট হাউজ। জেলা শহরে এর থেকে ভালো মানের হোটেল আপনি আর কোথাও পাবেন না। তাদের খাবার ব্যাবস্থাও খুব ভালো। একটু কমে থাকতে চাইলে যেতে পারেন
নোয়াখালী সার্কিট হাউস, গণপূর্ত রেস্ট হাউস, সওজ রেস্ট হাউস, এলজিইডি রেস্ট হাউস, বন বিভাগ রেস্ট হাউস, রেড ত্রিুসেন্ট রেস্ট হাউস, বিআরডিবি রেস্ট হাউস, আল-আমিন গেস্ট হাউস, পূবালী হোটেল, হোটেল আল-মোর্শেদ, হোটেল লিটন, হোটেল নিজাম, হোটেল রাফসান, হোটেল আর-ফারহান, হোটেল রয়েল, হোটেল মোবারক, গুড হিল কমপ্লেক্স। বুঝতেই পারছেন থাকার জায়গা নিয়ে মাইজদিতে কোন সমস্যা নেই

মাইজদিতে রয়েছে কিছু খাবারের চমৎকার খাবারের দোকান। এইখানে এসে এই খাবারগুলো টেস্ট করতে ভুল করবেন না। দত্তের হাটের শ্রীরামের রসগোল্লা এবং জিলাপি, মোহাম্মদিয়া হোটেলের পরোটা, গরুর মাংস হালিম, দই এবং চা, ফাইভ স্টার হোটেলের রসগোল্লা,  শহীদ মিনারের সামনে কচিকাঁচার মেলার সামনের রঙ চা এইগুলোর স্বাদ অবশ্যই নিয়ে আসবেন। 

Wednesday, October 21, 2015

সেনবাগ উপজেলা


নয়নাভিরাম সুন্দর গ্রামের দৃশ্য দেখতে চান? নিখাঁদ মাটির মানুষ দেখতে চান?

চলে যান নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়। নোয়াখালীর একেবারে শুরুতে অবস্থিত এই উপজেলাটির আয়তন ১৫৫.৮৩ বর্গকি.মি। গড় সাক্ষরতার হার ৭০.৩%। একটা উপজেলা হিসেবে ঈর্ষনীয় সাফল্য।


এই উপজেলায় চোখ ভরে দেখার মতো একটা স্থাপত্য হচ্ছে হাক্কানি জামে মসজিদ। উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে হাক্কানি জামে মসজিদ খুব বেশিদিন হয়নি সংস্কার করা হয়েছে। পুরাতন মসজিদ ভেঙ্গে নতুন করে মসজিদটি স্থাপন করার পর বাংলাদেশের অনেকের কাছে খুব পরিচিত একটা মসজিদ এই হাক্কানি জামে মসজিদ। এই মসজিদ দেখতে এলে কাবিলপুর গ্রামের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করতে পারে। ছবির মতো মেঠোপথ এবং দুই পাশে সবুজ ধানখেত দেখে মুগ্ধ হতে হবে আপনাকে। ভ্রমন করার
জন্য রয়েছে আরো কিছু দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে কেশারপাড় দিঘী, ভুঞার দিঘী, কাকু দরবেশের মাজার, কাদরার কিল্লা, বীরকোটের বীরের মুর্তি কুশাগাজীর মসজিদ, গনশা দীঘি। দীঘির একটা ব্যাপার বলে দেই আপনাদের – কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের সব দীঘি কিন্তু তার প্রকৃত রূপ হারিয়েছে। এক সময় এই সেনবাগ উপজেলায় খালে উথাল পাতাল স্রোত ছিল। সময়ের সাথে সাথে সেগুলো আজ মৃতপ্রায়।

ফেরার সময় অবশ্যই সেনবাগ বাজার হয়ে আসবেন এবং তাজনেহার হোটেলে ঢু মারতে ভুলবেন না।